হাতিরঝিল প্রকল্প নগর বিনোদনের নতুন প্রাণকেন্দ্র




মেহেদী হাসান


কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ বা প্রগতি সরণির বিরক্তিকর যানজট ঠেলে কোনোরকমে প্রবেশ করতে পারলেই অনাবিল সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন লেক। এঁকেবেঁকে চলা রাস্তা, সড়কদ্বীপে রঙিন ফুল মন না মাতিয়ে পারে না। হঠাৎই চোখ আটকে যায় নৌকা বাইচে! তাও ইট-কাঠ আর কংক্রিটের এ নগরীতে। এ কী! রাজহাঁসের জলকেলিও তো চলছে! না! একে তো ঢাকা মনে হচ্ছে না! ঢাকার মধ্যে এ যেন এক স্বপ্নপুরী। এটি দেশের বিনোদনের সবচেয়ে বড় ও নান্দনিক স্থাপনা। বলছিলাম, সদ্য উন্মুক্ত হাতিরঝিল প্রকল্পের কথা।


যেভাবে শুরু

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষায় এ নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা হয় ২০০৭ সালের মাঝামাঝি। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষ হওয়ার পর ওই বছরেরই ৮ অক্টোবর একনেকের সভায় এটি অনুমোদন পায়। প্রাথমিক অবস্থায় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৪৮০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০০৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় ২০০৯-এর জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার। কিন্তু ২০০৯-এর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ, বাড়িঘর উচ্ছেদ আর একাধিকবার নকশা বদলের কারণে এর বাস্তবায়নে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত বিলম্ব। এ ছাড়াও আদালতে ঝুলে থাকা অনেক মামলাও নিষ্পত্তিতে সময় লেগেছে। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেগুনবাড়ী-হাতিরঝিল প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হলেও চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বুধবার এটির উদ্বোধন করা হয়। শেষ পর্যন্ত এর ব্যয়ভার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।



Brazil won by 3-1

Brazil 3-1 Croatia
brazil, croatia

চেতনায় ভাষা জাদুঘর


শামস আহমেদ

মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন এ দেশের বীর তরুণেরা। তাদের এই আত্মত্যাগের ফলেই বাংলা ভাষা আজ সারা বিশ্বে শুধু একটি ভাষাই নয়, একটি রক্তঝরা আন্দোলনের নাম। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। 
 জাদুঘর, ঐতিহ্য


আর এ অজানা থাকার কারণে আমাদের মধ্যকার ভাষার চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ। ভুলে যাচ্ছি যাদের অবদানের জন্য আজ আমরা সুন্দরভাবে নিজ ভাষায় কথা বলছি তাদের কথা। ভাষা শহীদদের অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড়ে স্থাপিত হয়েছে ভাষা দাবিতে আত্মোৎসর্গকারীদের স্মরণে ভাষা জাদুঘর।


আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই গড়ে তোলা হয়েছে এ জাদুঘর। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ে সংগৃহীত নানা দ্রব্যসামগ্রী, বিভিন্ন দলিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই জাদুঘরটি। ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকাসহ সমগ্র দেশে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের রূপরেখা যথাসম্ভব তথ্যনিষ্ঠ রূপে তুলে ধরার পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে এর প্রভাব বিশেষত একুশের প্রভাব চিহ্নিত করা এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। এ জাদুঘরটি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত ও আন্দোলিত করবে। জাদুঘরটিতে ঘুরতে আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী তাহসানের মতে, আমি নিশ্চিত জাদুঘরটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয় ও গবেষণার কাজে বেশ গুরুত্বপূূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

জাদুঘরটি পলাশী বাজারস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পশ্চিমে, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দক্ষিণে অবস্থিত। জাদুঘরটির দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

নির্মাণের নানা কথা
প্রায় ৩৩ শতাংশ জায়গায় উপর ৬৮ লাখ ৫ হাজার ৩শ’ ১৫ টাকা ব্যয়ে ঢাকা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে জাদুঘরটি নির্মিত। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল প্রভাতী এন্টারপ্রাইজ। ২০০৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শেষে তাত্ত্বাবধানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এর পরিচালনা ও সার্বিক দায়-দায়িত্বে¡ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় ভাষা শহীদ আবুল বরকতের নামে একটি স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করার। একই বছরের ৮ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে কার্যাদেশ দেয়।

জাদুঘরের ভেতর-বাহির
ভবনের তিনপাশে প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে। লোহার গ্রিলের নান্দনিক পাঁচিলে ঘেরা এই জাদুঘরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশের সময় সাথে থাকা ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাইরে রেখে যেতে হয়। এ জন্য জাদুঘরের অভ্যর্থনা ডেস্কে রাখা যায়। দ্বিতল ভবনের পুরোটা গ্লাস এবং দেয়ালের নিবিড় সংমিশ্রণে করা হয়েছে। ইচ্ছে করলেই বাইরে থেকে ভেতরের সব দেখতে পাবেন। তবে দ্বিতীয় তলায় তা হবে না। জাদুঘরের এক কোণে রয়েছে দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে তিনটি ছোট-বড় বেলকনি। এখানে বসে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে আরো নান্দনিক কিছু কাজ। এর দ্বিতল ভবনের উপর তলায় রয়েছে একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে রয়েছে ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত শ’তিনেক বই। আরো বই সংগ্রহের কাজ চলছে। লাইব্রেরির তিন পাশে রাখা হয়েছে খোলা ছাদ। এতে সহজে আলো বাতাস পাওয়া যায়। লাইব্রেরিটির চারপাশে রয়েছে ফাইবার গ্লাসের জানালা। লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার জন্য রয়েছে সুন্দর চেয়ার টেবিল। মনভোলানো পরিবেশে পড়াশোনা করা যায়। লাইব্রেরিতে রয়েছে একটি ড্রয়িং রুম এবং দুটি ওয়াশ রুম।

কী দেখবেন
জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত আছে শহীদ আবুল বরকত ব্যবহৃত কাচের পিরিচ, ঘড়ি ও ছোটবেলার একটি পুতুল। রয়েছে তার বাবাকে লেখা কিছু চিঠি। এ ছাড়া দেখা যাবে শহীদের পরিবারের কিছু দুর্লভ ছবি। ভাষা আন্দোলনের উপর নির্মিত নানান ডকুমেন্টারিও এখানে পাওয়া যাবে। এখানেই সংরক্ষিত রয়েছে শহীদ আবুল বরকতের পাওয়া মরণোত্তর একুশে পদক। সংগ্রহশালাটিতে ঢোকার পথে রয়েছে ফাইবার গ্লাসের দরজা। সহজে আলো ঢোকার জন্য ঘরের দুই পাশে ব্যবহার করা হয়েছে ফাইবার গ্লাস। এর ফলে সহজে সকালের প্রথম রোদ ঘরে প্রবেশ করে। ভেতরে সাদা গ্রানাইট পাথরের মেঝে ঘরটির মধ্যে আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করেছে। যা এক অপূর্ব নান্দনিক স্থাপত্যকলায় ভরপুর।

প্রদর্শনী গ্যালারি
ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারির সুুবিধা রয়েছে। বিশেষ দিনে বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং ভাষা আন্দোলনের উপর তৈলচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের উপর তৈলচিত্র প্রদর্শনী হয় এখানে।
পরিদর্শন সহায়তায় গাইড
দেশ বা বিদেশ থেকে যারা এই জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে আসবেন তাদের জন্য জাদুঘর কর্তৃপক্ষ একজন গাইড নিয়োগ করে রেখেছেন। যিনি পুরো জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের দেখিয়ে থাকেন। এ জন্য কাউকে কোনো টাকা দিতে হয় না। জাদুঘরটিতে গাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ লাইব্রেরি সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইব্রেরির তত্ত্ব¡াবধায়ক সুন্দরভাবে গাইড করছেন এবং বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করে থাকেন। জাদুঘরটির তত্ত্ব¡াবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ গোলাম মোস্তফা। প্রয়োজনে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। মোবাইল : ০১৭১৬-৮৮৭৭৯৫।


শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত এই জাদুঘরটি পরিদর্শনে যায় শিক্ষার্থীরা। তবে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীর জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এখানে আগত প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য টিফিনের ব্যবস্থা করা এবং পরিবহন ব্যবস্থার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান লাইব্রেরির তত্ত্ব¡াবধায়ক।

পরিদর্শনে আসছে যারা
প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ জন দর্শনার্থী আসে জাদুঘরটিতে। জাদুঘরে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ইকরামুল জানালেন, এখানে আসার পর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আরো সুন্দরভাবে জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি অনেক না জানা তথ্য। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর উচিত এই জাদুঘরটিতে আসা এবং ’৫২-এর চেতনাকে বুকে লালন করা। তবেই এ প্রজন্ম শিখবে ভাষা শহীদদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে।

পার্কিং ব্যবস্থা
অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এই লাইব্রেরিতে ঘুরতে আসাদের কথা মাথায় রেখে এবং ঢাকা শহরের যানজটের কথা ভেবে বিশেষভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতু ভবনটির তিনদিকে প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে, সেহেতু গাড়ির চাপ একটু বেশি। আর এই চাপ সামলাতে এক সঙ্গে প্রায় ১৫-২০টি পর্যন্ত গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে নিজস্বভাবে। এ জন্য কোনো প্রকার মাসুল দিতে হয় না।


ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক বর্ধমান হাউস






গাজী মুনছুর আজিজ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীর মূল ভবন বর্ধমান হাউসসাদা ধবধবে ভিক্টোরিয়া আমলের বাড়ি এটিএকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে ভাষার মাসে বসে একুশে বইমেলাশুধু বইমেলা বললে ভুল হবে, এটি প্রাণের মেলাওযে বাড়িটিকে কেন্দ্র করে এতসব আয়োজন সেই বর্ধমান হাউসের ইতিহাসটুকু একেবারেই তুচ্ছ নয়

LinkWithin